সংগৃহীত ছবি |
জলঢাকা তথা নীলফামারী জেলায় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যে ক'জন ক্ষণজন্মা পুরুষকে বাদ দিলে জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাস অসম্পুর্ন হয়ে যায় তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের দীর্ঘতম সময়ের সেক্রেটারি, জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর নন্দিত জননেতা মরহুম আব্দুল গণি। যাদের অবিস্মরনীয় ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, অবিরাম ছুটে চলা জলঢাকা উপজেলা জামায়াতকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যার মোহময় যুক্তিপুর্ন বক্তব্য, অহিংস নীতি, মানব দরদী চেতনা চরম বিরোধীকেও তার সামনে নত হতে বাধ্য করতো। বিরোধী পক্ষের হিংসাত্মক আচরন, চরম বিদ্বেষী মানসিকতা, সন্ত্রাসী নীতির বিপরীতে তাঁর অবস্থান ছিলো বিনয়ের অবতার। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেই শান্ত ও নম্র থেকে হাসিমুখে সমাধান করার আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা।
ছোট্ট একটি চামড়ার ব্যাগ বগলদাবা করে সেই সকালবেলা বাসা থেকে আলফালাহ'র উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসতেন, ফিরতেন গভীর রাতে। পরিবার পরিজনের ভরনপোষন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে সংগঠনকেই জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করার ঈমানদীপ্ত এই চেতনা খুব কম মানুষের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। সুযোগ আসা সত্বেও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যান করতে অনেক বড় মাপের কলিজা লাগে বৈকি!
মরহুমের সাথে যখনই সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ হয়েছে, ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী সম একজন মানুষের সামনে নিজের পড়াশোনার সীমাবদ্ধতা আর জ্ঞানের অসারতা ড্যাবড্যাব করে প্রকাশিত হতো। ঈমানের কি দৃঢ়তা, আল্লাহর প্রতি কি অসীম আস্থা থাকলে সবকিছুই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে জেলের ভিতরেও নিশ্চিন্ত থাকা যায়- একসাথে বেশকিছুদিন জেলে থাকার সুবাদে ওনাকে না দেখলে সেটা কখনও জানা হতো না।
তন্ময় হয়ে শুনতাম ওনার বক্তব্য। একটা জীবন্ত ইতিহাস গ্রন্হ! স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট, পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ, ভারতের কূটনীতি, চেতনার অসারতা, জামায়াতের বর্তমান ও ভবিষ্যত, মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, জাতীর করণীয় এসব নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা।
সারাজীবন প্রতিটি মূহুর্তে তিনি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন আর এর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার সন্তষ্টি অর্জনকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করে নিয়েছিলেন।
আজ ৭ জানুয়ারী, ২০২১ সালের আজকের তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন আল্লাহর সান্নিধ্যে। মজলুম এই বান্দাকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যেনো তার অসীম রাহমাতের ছায়াতলে স্থান দান করেন। সারাটি জীবন যে জান্নাতের প্রত্যাশায় তিনি লোভনীয় সরকারী চাকুরি ছেড়ে দারিদ্র্যতার জিন্দেগী বরন করে নিয়েছিলেন, সেই জান্নাতের সম্মানিত মেহমান হিসেবে তাঁকে কবুল করেন!