শায়খ আব্দুর রহমান ঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন ‘প্রত্যেক প্রাণিই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১৮৫)। আর মৃত্যুর মাধ্যমেই দুনিয়ার জীবনের সমাপনী আসে এবং আখিরাতের অনন্ত অসীম জীবনের সূচনা হয়। এ জীবনের দুটি অবস্থান। একটি জান্নাত, আরেকটি জাহান্নাম। তারাই হবে জান্নাতি যারা আল্লাহ ও তাঁ upর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুনিয়ার বুকে জীবন যাপন করেছে। আর যারা তা অমান্য করেছে তারাই জাহান্নামি। আর জাহান্নাম জাহান্নামিদের শাস্তির জায়গা ও দু:খের কারাগার। তবে এমন কিছু আমল আছে, যা মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তির সন্ধান দিতে পারে।
জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাঁচুন এবং পরিবারকে বাঁচান। আল্লাহ তায়ালার আদেশও অনুরূপ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে রূঢ় স্বভাব ও কঠিন হৃদয়ের ফেরেশতাগণ নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনো আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করে না। তাদেরকে যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাই পালন করে।’ (সুরা আত-তাহরীম : ৬) এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পিতা-মাতা বা পরিবার প্রধানের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করলে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অত:পর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে তার পরিবার-পরিজনকেও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা।সিমাক ইবনু হারব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) জুমুআর খুতবায় বললেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। শোনো, জাহান্নাম থেকে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি।’ এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি দূরের বাজারেও অবস্থান করত, তাহলে এই কথাগুলো সে শুনতে পেত। আর এই পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.)-এর চাদর কাঁধ থেকে নিচে তাঁর দুই পায়ের কাছে পড়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৮৩৯৮)। আদি ইবনু হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মসলিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; এরপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তারপর আবার বললেন,‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো।’ এরপর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং অস্বস্তি প্রকাশ করলেন। এরকম তিন বার করলেন তিনি। তখন আমাদের মনে হলো, যেন তিনি জাহান্নাম দেখছেন। তারপর বললেন, ‘অর্ধেক খেজুর সাদকা করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। কেউ তা-ও না পারলে সে যেন উত্তম কথা বলার দ্বারা জাহান্নাম থেকে বাঁচে।’ (বুখারি : ১৪১৭; মুসলিম : ১০১৬)।
মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করলে মানুষ যেমন খুশি হয়, তেমনি মহান আল্লাহও খুশি হন এবং পুরস্কৃত করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না যে, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম ? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি থাকে, সহজ-সরল স্বভাবের, ন¤্রভাষী ও সদাচারী গুণে গুণান্বিত হয়।’ (তিরমিজি : ২৪৮৮)। নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত। হযরত হানজালা উসাঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ পাবন্দির সাথে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামাজ আদায় নিজের ওপর আল্লাহতায়ালার হক মনে করে, তবে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেয়া হবে।’ (আহমাদ : ৪/২৬৭)।