তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের সন্তানেরা বিশাল একটি স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছিল। তারা বুক পেতে বলেছিল ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’ কী সেই ঝড়! সেই ঝড় ছিল সমাজের অন্যায় অবিচার দুর্নীতি এবং দু:শাসনের বিরুদ্ধে। কোনো যুগেই যুবকেরা দুর্নীতি এবং দুঃশাসনকে সমর্থন করে না। বরঞ্চ তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। তরুণদের এতো ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এলো। এরপর মনে হয় লক্ষ্মীপুরে চাঁদাবাজি নাই। সবাই সমস্বরে জানান দেয় ‘চাঁদাবাজি’ এখনো আছে।
এসময় তিনি বলেন, বিনয়ের সঙ্গে বলি দয়া করে চাঁদাবাজি দখলবাজি বন্ধ করেন। দয়া করে মানুষের ওপর জুলুম করবেন না।
শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
২৪ সালের ৫ আগস্ট যুবকদের ভূমিকার প্রশংসা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্যালুট যুবক তোমাদের। তোমাদের জীবনবাজি রেখে লড়াইয়ের কারণে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তোমরা আবার চিরমুক্তির জন্য জেগে ওঠ। এবার শপথ নাও আমরা কুরআনের আলোকে গড়বই গড়ব ইনশাআল্লাহ। আমাকেও তোমাদের সঙ্গে চুল পাকা, দাঁড়ি পাকা এক যুবককে পাবা। লড়াইয়ের ময়দানে তোমাদের সঙ্গে আমাকে পাবা। মিছিলের পেছনে নয়, বরং সামনের কাতারে থাকব ইনশাআল্লাহ।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের যুবকেরা আমাদের স্বপ্ন। আমাদের যুবকরাই আমাদের বাংলাদেশ। এই যুবকদের হাতে বাংলদেশের দায়িত্ব তুলে দিতে চাই। হে যুবকেরা তোমরা তৈরি হও। ইনশাআল্লাহ তোমরা পারবে। অতীতে তোমরা পেরেছ, ভবিষ্যতেও পারবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা তোমাদের বুকে আলিঙ্গন করে কপালে চুমু দিয়ে এগিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।
শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থার উদাহরণ টেনে জামায়াত আমির বলেন, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র ছিল মদিনা কেন্দ্রিক রাষ্ট্র। সর্বশ্রেষ্ট শাসক ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সা.)। তিনি একটা আদর্শের ভিত্তিতে শাসন করেছিলেন। আদর্শটা ছিল আল কুরআনের আদর্শ। ইসলামের আদর্শ। আল্লাহর দেওয়া আদর্শ। তিনি যে আদর্শে দেশ শাসন করার কারণে একটি জাহেলি সমাজ পরিবর্তন হয়ে সোনালি সমাজ হয়ে গেল, সেই আদর্শকে যদি আবার আমাদের সমাজে গ্রহণ করে নিই, বাংলাদেশের সমাজও সোনালি সমাজে পরিণত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে শ্বশান বাংলা কায়েম করা হয়েছে। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, একমাত্র কুরআনই সোনার বাংলা দিতে পারে। আর কিছুই দিতে পারবে না। ইতোমধ্যেই বাংলার জমিনে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ। এখন হবে ইনশাআল্লাহ কুরআনের বাংলাদেশ। যারা কুরআনকে খন্ডিত করতে চান অথবা সহ্য করতে চান না, তাদেরকে আমরা বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এদেশের আপামর জনতা বাঁচতে চায় কুরআন বুকে নিয়ে। মরতেও চায় কুরআন বুকে নিয়ে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চায় কুরআন বুকে নিয়ে।
তিনি বলেন, এই দেশে যতগুলো ইসলামী দল আছে সবগুলোর দিকে আপনারা তাকিয়ে দেখুন ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে শুরু করে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত এই সামান্য পরিক্রমায় কোথাও দেখবেন না ইসলামী দলের কোনো লোক জাতির ওপর জুলুম করছে। চাঁদাবাজি করছে কিংবা দখল বাণিজ্য করছে। এর একমাত্র কারণ তারা কুরআনকে সম্মান করে এবং বুকে ধারণ করে। তারা আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, লক্ষ্মীপুরকে ফুলের বাগান বানানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এই লক্ষ্মীপুরকে ছোপ-ছাপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ দিয়ে সাজানো হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫ আগস্ট। কিন্তু আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন একদিন আগে ৪ আগস্ট। এটা বিনামূল্যে নয়। অতি উচ্চ মূল্যে।
তিনি বলেন, ইনসাফের বাংলাদেশ মানবিক বাংলাদেশ এবং কুরআনের বাংলাদেশ কায়েমের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুবকদের সাথে থাকব, তাদের বুকের ভেতরে থাকব।
আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একটি গোষ্ঠী লক্ষ্মীপুরকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছিল। বিশেষ করে একটি কুখ্যাত পরিবার আপনারা তাদের সবাইকে চিনেন জানেন। এই সন্ত্রাসীরা আমার ভাই ডা. ফয়েজ, যাকে বলা হতো মানবিক চিকিৎসক, তাকেসহ অসংখ্য দেশপ্রেমিক মানুষকে তারা খুন করেছে। যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকে ততদিন তারা রাজা। আর যখন ক্ষমতা হারায় তখন তারা গর্তের ইঁদুর। আসুন আমরা এমন জীবন গঠন করি যে জীবন সর্বাবস্থায় সম্মানের হয়। ফাঁসির রশিতে ঝুললেও সম্মানের হয়। আবু সাঈদের মতো বুক পেতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করি।
অবিলম্বে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে দলের বেশি সংখ্যক শীর্ষনেতাকে খুন করা হয়েছে সেই দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এক এক করে ১১ জনকে খুন করেছে। আল্লাহ একজনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি আমাদের ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম। আফসোসের বিষয় ৬টি মাস চলে গেল, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের তাড়াল কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলামের ঘাড়ে ফ্যাসিবাদের বোঝা এখনো রয়েই গেল। এক এক করে জাতীয় নেতৃবৃন্দ সবাই বের হয়ে আসলেন; এখনো এটিএম আজহারুল ইসলাম থেকে গেলেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তাই সেদিন মনের কষ্ট নিয়ে বলেছি আজহার ভাইকে ভেতরে রেখে আমি আর বাইরে থাকতে চাই না। আমি সরকারকে অনুরোধ করছি আগামি ২৫ তারিখ নিজেকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে বলব, আমাকে গ্রেফতার করুন এবং আমাকে কারাগারে পাঠান। যেদিন আজহারুল ভাইয়ের মুক্তি হবে তার পরের দিন আমাকে মুক্তি দিয়েন।
লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমীন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কুমিল্লা মহানগরী আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
এর আগে রায়পুর পৌরসভা আমির হাফেজ ফজলুল করীমের অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে গণজমায়েতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোছাইন নূরুন্নবীর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ফোরামের সভাপতি ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আনোয়ারুল আযিম, ফেনী জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, নোয়াখালী জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা আলা উদ্দিন, ফেনী জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, লক্ষ্মীপুর জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট নজির আহমাদ, লক্ষীপুর-৪ রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা নায়েবে আমির এ আর হাফিজ উল্লাহ, নোয়াখালী জেলার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়্যেদ আহমদ, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট মুহসিন কবির মুরাদ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা আমির অ্যাডভোকেট আবুল ফারাহ নিশান, লক্ষ্মীপুর শহর শাখা শিবিরের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা।