তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ জাতিসংঘের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের’ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে জুলাই-আগস্টে যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বিক্ষোভ দমাতে ১৪শ’ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। ১২ বছরের শিশুর গায়ে ২০০ গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। চোখ হারিয়েছে কয়েকশ’ মানুষ এবং পঙ্গু হয়েছে হাজারেরও বেশি। বিক্ষোভকারীদের দমাতে ‘প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের’ নির্দেশ দেয় শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-নিপীড়ন পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় তৎকালীন সরকার এবং নিরাপত্তা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, আওয়ামী লীগ, এর সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠন যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে’। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিট) জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় জেনেভার প্যালেস দেস নেশনে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত এই প্রতিবেদন সংস্থাটির দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনে’র সুপারিশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর কর্মকাণ্ড সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
হাসিনা রেজিমের দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে (ওএইচসিএইচআর) ধন্যবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি পুলিশ, প্রসিকিউটর এবং বিচারকসহ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। জেনেভায় প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওএইচসিএইচআর-এর এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন। এছাড়া হাইকমিশনার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানিও উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র ঃ দৈনিক ইনকিলাব।