তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃজুলাই আন্দোলনে হত্যা, দূরর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমানের বিরুদ্ধে। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যার ঘটনায় পল্টন থানার একটি মামলায় (মামলা নং-২৬ (০৩) ২৫) আসামি করা হয়েছে আশিক রহমানকে। মামলার প্রথম আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দূরর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে আরটিভির সিইওর বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জানিয়েছেন একজন আইনজীবী।
জানা যায়, ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই পল্টনে সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবক হত্যার ঘটনায় মামলা করেন তার চাচাতো ভাই। সেই মামলায় ১৩১ নম্বর আসামি করা হয় সৈয়দ আশিক রহমানকে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। পরামর্শদাতা, উস্কানিদাতা ও গণহত্যার পক্ষের সাফাইকারী হিসেবে আশিক রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে দূরর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে আরটিভির সিইওর বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জানিয়েছেন একজন আইনজীবী। অভিযোগ অনুযায়ী, সৈয়দ আশিক রহমানের নামে ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পাশিপাশি, সাংবাদিক না হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছিলেন বার্তা বিভাগের প্রধান। এই পদ ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি ও অর্থপাচার করেছেন। এমনকি বিগত আওয়াম লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গেছেন। আর বিভিন্ন সময়ে তাদের ব্যবহার করে, আরটিভির সিইও হয়েও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
সৈয়দ আশিক রহমানের স্ত্রী তানজিনা শারমিন ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন(এটুআই)প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা। সম্পদের পাহাড় গড়তে স্ত্রীর এই পদকেও ব্যবহার করতেন আশিক রহমান।
দুর্নীতির টাকা দিয়ে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ফ্লাট, গাড়ি এবং অর্থ পাচার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি, তেলের পাম্প গড়ে তুলেছেন। এছাড়া অভিযোগ আছে তিনি মালয়েশিয়াসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
গত কয়েক বছরে দুর্নীতির টাকা দিয়ে তিনি, উত্তরায় (বাড়ি: ১৫, রোড: ১৩, সেক্টর ৬, ফ্লাট: এ-৪, বি-৪) প্রায় চার কোটি টাকা দিয়ে দুটি ফ্লাট কিনেছেন। যার একটিতে নিজে এবং অন্যটিতে তার বোন বসবাস করেন। ইস্কাটনে (১৩১ ইস্কাটন প্লাজা, নিউ ইস্কাটন রোড: ১৩-এ) প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট, বলানীতে (বাড়িঃ ৮৯, র্যাঙ্গস সিম্ফোনী, ব্লকঃ এ, রোডঃ ২৫/এ, বনানী) প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া, পূর্বাচলে (শামসুন নাহার রহমান ভিলা, প্লটঃ ২১, সেক্টরঃ ৮, রোডঃ ৩০৪, পূর্বাচল নতুন শহর) মা শামসুন নাহারের নামে পাঁচ কাঠার প্লটে গড়েছেন বাংলো বাড়ি। যার দাম ১০ কোটি টাকার বেশি। ২০২৩ সালে বাবা সৈয়দ মতিউর রহমানের মৃত্যুর পর দাফন করেছেন বনানী কবরস্থানে। আর সেই কবরটি ২ কোটি টাকায় কিনেও নিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত ১টি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরটিভির ৫ টি গাড়ি তার জন্য বড়াদ্দ নিয়েছেন। এছাড়া রাজধানীতে তিনি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে তার এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ পাচার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া শহরে তিনটি বাড়ি ও তেলের পাম্প গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আশিক রহমান। তিনি বেশিরভাগ সময়ে বাংলাদেশে বসবাস করলেও তার পরিবার (স্ত্রী ও দুই সন্তান) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া শহরে রাজকীয়ভাবে বসবাস করেন। সেখানে পুরো পরিবারের নাগরিকত্ব নেয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
আমেরিকায় গানের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে কয়েক’শ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এছাড়া মালয়েশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে অর্থ পাচার করে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার পাসপোর্ট (BW0851110) তদন্ত করলেই দেখা যাবে তিনি গত ৭-৮ বছরে আরটিভির অনুষ্ঠানের নামে এবং ব্যক্তিগত সফরে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কতবার গিয়েছেন। প্রতি বছর ১২-১৫ বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতেন সাংবাদিক নামধারী এই কর্মকর্তা। ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্টের পর ছয় মাসে ৭-৮ বার যাতায়াত করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যাতায়াতের সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। আর এসব ভ্র্রমন করেছেনে এয়ারলাইন্স এর সবচেয়ে দামি, বিজনেস ক্লাসে। অভিযোগ আছে, বিএনপির নেতাদের সাথে আতাত করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিয়েছেন লন্ডনেও। সেই প্রমানও পাওয়া গেছে। ফিরে এসে হয়েছেন আবার ক্ষমতাবান। যার কারণে এতো অপরাধ করেও এখনো তিনি ধরাছোয়ার বাইরে।
বিগত সরকারের তোষামদি করে গেছেন বছরের পর বছর। বাংলাদেশ এবং আমেরিকাতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠান করে সরকারের আস্থা অর্জন করে নানা সুবিধা নিতেন। সব অনুষ্ঠানই থাকতো আওয়ামী লীগের কোন মন্ত্রী বা সিনিয়র নেতাকে ঘিরে। শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে নিজ উদ্যোগে হাতিরঝিলে অনুষ্ঠান করেছেন। যেখানে বিগত সরকারের মন্ত্রী, মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। গণভবন ও পিএম কার্যালয়ের সকল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতেন। শেখ হাসিনার সুনজরে আসার জন্য তেলবাজি করে প্রশ্নও করতেন মাঝেমধ্যে।
বঙ্গবন্ধুর নামে ডকুমেন্টারি বানিয়ে পেয়েছেন ন্যাশনাল এওয়ার্ড। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০’ জিতে নেন সৈয়দ আশিক রহমান। ২০২২ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার পক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সৈয়দ আশিক রহমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড নির্মিত সৈয়দ আশিক রহমান প্রযোজিত প্রামাণ্যচিত্রটি গবেষণা, চিত্রনাট্য, আবহসংগীত ও পরিচালনা করেছেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু।
এসবেই ক্ষ্যান্ত হননি, নিজ উদ্যোগে বানিয়েছেন ইনডেমনিটি নাটক। যেখানে জিয়াউর রহমানকে বানিয়েছিলেন খলনায়ক। এসব করে ধরাছোয়ার বাইরে থাকার জন্যই সাংবাদিক না হয়েও ছিলেন বার্তা বিভাগের প্রধান। সম্প্রতি চাপে পরে ছাড়তে হয়েছে সেই পদটি। কিন্তু ততদিনে তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তবে এখনো থেমে নেই তার দুর্নিতী। দেশে থাকা অর্থ পাচার করতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত বারিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচ আগস্টের পরদিনই ভোল পাল্টে ফেলেছেন। সেজেছেন আওয়ামী বিরোধী।
এর আগে ২০২৩ সালেও সৈয়দ আশিক রহমানের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পরেছিলো দুদকে। কিন্তু ততকালীন একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে সেই অভিযোগ গায়েব করান এই সাংবাদিক নামধারী সৈয়দ আশিক রহমান।