Monday, March 17, 2025

দলের আয়-ব্যয় নিয়ে কেন লুকোচুরি?



তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এই বিধানে আয়-ব্যয়ের খাতও উল্লেখ করতে হয়। নিয়মের মধ্যে থাকলেও আয়-ব্যয়ের হিসাব সাধারণত নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখে না। 

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশ থেকে কোনো তহবিল নিতে পারে না। এনজিও থেকেও কোনো তহবিল নেওয়ার বিধান নেই।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কত অনুদান নেওয়া যাবে তা বলা আছে। ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বোচ্চ বছরে ১০ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ বছরে ৫০ লাখ টাকা নেয়ার বিধান আছে। দলগুলো ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ অনুদান গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান নিতে হয় চেকের মাধ্যমে।

তবে ফান্ডিং-এর এই বিধানটি খুব বেশি স্পষ্ট নয়। সংক্ষেপে বলা থাকলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত নিয়ম আরপিওতে নেই। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে মূলত তাদের প্রতি বছরের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন তা খতিয়ে দেখতে পারে। এর বাইরে এটা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কিছু করে না বলে জানান মো. রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশে নির্বাচনে যারা প্রার্থী হন তাদের হলফনামার মাধ্যমে নিজেদের আয় ও সম্পদের হিসাব জমা দেন। আর নির্বাচনে খরচের হিসাবও জমা দিতে হয়। আর যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয় তাদেরও দলীয়ভাবে নির্বাচনের খরচ জমা দিতে হয়।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিবছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হয়।

২০২৪ সালে বিএনপি আগের বছর ২০২৩ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী ওই বছর বিএনপির আয় হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। 

২০২২ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল তিন কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৩ টাকা।

২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয় ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর আগের বছর ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয় ১০ কোটি ৭১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৮ টাকা। ব্যয় হয় সাত কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৯ টাকা।

ওই বছরে জাতীয় পার্টির আয় হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩১ টাকা। এ সময় ব্যয় হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে দুই কোটি ৯ লাখ ৬১ হাজার ৩০৬ টাকা।

দলগুলো আয়ের উৎস হিসেবে প্রধানত সদস্যদের চাঁদা এবং শুভানুধ্যায়ীদের অনুদানকেই আয়ের খাত হিসাবে দেখিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকায় তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়নি। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এখন ৫৪টি। আগামী ২০ এপ্রিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন এবং এর আগে পরে রাজনৈতিক দলের অর্থের উৎস এবং এর স্বচ্ছতা নিয়ে কথা হচ্ছে। বিশেষ করে এনসিপির আত্মপ্রকাশের দিন মনিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশের খরচ, ঢাকায় অফিস, হেলিকপ্টারে গণসংযোগ, পাঁচতারা হোটেলে এক হাজার ৩০০ মানুষের ইফতার পার্টি, ইত্যাদি নানা ব্যয়বহুল খরচে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।


সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক 

শেয়ার করুন