Thursday, March 20, 2025

মোবারক হো মাহে রমজান



 মাহে রমজানের প্রতিদিন সুবেহ সাদিক হতে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সিয়াম পালন করা মুসলিম-মুসলমান নর ও নারীর উপর ফরজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পিয়ারা নবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্বোধন করে আল কুরআনে ইরশাদ করেছেনÑ ‘আর আপনি আপনার রবের নাম স্মরণ করুন এবং তাঁর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মগ্ন হোন।’ (সূরা আল মুযযাম্মিল : আয়াত-৮১) অর্থাৎ আপনি সমগ্র সৃষ্টি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি বিধানে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হোন। এর সাধারণ অর্থে ইবাদতে শির্ক না করাও দাখিল এবং নিজের সমস্ত কর্মকা-ে তথা উঠাবসায়, চলাফেরায় দৃষ্টি ও ভরসা আল্লাহ তায়ালার প্রতি নিবদ্ধ রাখা এবং অপরকেও লাভ- লোকসানকারী ও বিপদাপদ থেকে উদ্ধারকারী মনে না করাও দাখিল। দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুকে পরিত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে যা আছে তৎপ্রতি মনোনিবেশ করাও এর অর্থের অন্তর্গত। কিন্তু এই ‘তাবাত্তুল’ তথা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ সেই রূহবানিয়াত তথা বৈরাগ্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল কুরআনে বৈরাগ্যের নিন্দা করা হয়েছে এবং হাদিসে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কেননা, শরিয়তের পরিভাষায় ‘রূহবানিয়াত’ বা বৈরাগ্য এর অর্থ দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা এবং ভোগ-সামগ্রী ও হালাল বস্তুসমূহকে ইবাদতের নিয়তে পরিত্যাগ করা।

এই শ্রেণির রূহবানিয়াত বা বৈরাগ্যকে ইসলাম সমর্থন করে না। পক্ষান্তরে আলোচ্য আয়াতে যে তাবাত্তুল বা সম্পর্কচ্ছেদের আদেশ করা হয়েছে তা এই যে, বিশ্বাসগতভাবে অথবা কার্যগতভাবে আল্লাহ তায়ালার সম্পর্কের উপর কোনো সৃষ্টির সম্পর্ককে প্রবল হতে না দেয়া। এ ধরনের সম্পর্কচ্ছেদ বিবাহ, আত্মিয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি যাবতীয় সাংসারিক কাজ-কারবারের পরিপন্থি নয়; বরং এ গুলোর সাথে জড়িত থেকেও এই ‘তাবাত্তুল’ সম্ভবপর। রাসূলগণের সুন্নাত : বিশেষ করে রাসূলকুল শিরোমনি মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সমগ্র জীবন এবং আচারাদি এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আলোচ্য আয়োতে ‘তাবাত্তুল’ শব্দ দ্বারা যে অর্থ ব্যক্ত করা হয়েছে, মূলত তা হলো সকল ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য করা এবং এর মাধ্যমে একমাত্র তারই মুখাপেক্ষী হওয়া এবং চাওয়া-পাওয়ার সব কিছু তার কাছে নিবেদন করা। (তাফসিরের কুরতুবি) মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় লিপ্ত নর ও নারী নির্বিশেষে সবাকেই একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার প্রত্যাশা করে এবং রোজার হালতে অন্যান্য রোজাদারগণকেও সচকিত করে। কোনো প্রকার আবিলতা যেন তাদেরকে স্পর্শ করতে না পারে তজ্জন্য সজাগ ও তৎপর থাকে। এ নির্বিষ্টচিত্ততাই হলো ‘তাবাত্তুলের’ মূল কথা। এই দুনিয়ার মানুষ দ্বীনমাণের কর্মব্যস্ততা ও জীবিকার জন্য ঘোরাঘুরির কারণে অন্তরের ব্যস্ততা নিয়ে দিনকাল অতিক্রম করে। অনেক সময় দিনের কর্মব্যস্ততার কারণে একাগ্রচিত্তে ইবাদতে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এহেন কঠিন অবস্থায়ও রোজাদারগণ সিয়াম সাধনায় তৎপর থাকে। কোনো রকম গর্হিত ও অন্যায় কর্মের দিকে অগ্রসর হয় না। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ রহমত, যা সিয়াম সাধনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক প্রচ্ছন্ন রেখেছেন এবং তিনি এই ঘোষণাও প্রদান করেছেন যে, আস্ সাওমুলি ওয়া আলা আযাজ্বি বিহি-অর্থ রোজা কেবল আমারই জন্য এবং আমিই তার বিনিময় ইচ্ছামতো প্রদান করব। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সিয়াম সাধক হিসেবে কবুল করুন, আমিন!


লেখক ঃ এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশি

শেয়ার করুন