Wednesday, March 5, 2025

ডঃ মাহমুদুর রহমানের কলাম- কিংস পার্টি সমাচার



তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শেষ পর্যন্ত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। এই দল গঠন নিয়ে নানারকম বিতর্ক বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল। সেই বিতর্কগুলোর মধ্যে প্রধানটি ছিল কিংস পার্টি-বিষয়ক।
ক্ষমতায় থেকে তাদের রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত হবে কি না, সে বিষয়ে অনেক ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও দল প্রশ্ন তুলেছেন। যেহেতু আমি ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি করি, তাই ভাবলাম এ সপ্তাহের মন্তব্য-প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কিংস পার্টি নিয়ে খানিকটা ইতিহাস চর্চা করা যাক। উপমহাদেশ দিয়েই বরং আলোচনা আরম্ভ করি।
উপমহাদেশের প্রথম কিংস পার্টির নাম শুনলে অনেকেই হয়তো চমকে উঠবেন। কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েই নাম বলছি। উপমহাদেশে প্রথম কিংস পার্টি গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সাহেব ভদ্রলোকের নাম ছিল এলান অক্টেভিয়ান হিউম। ব্রিটিশ কলোনির শাসকদের সম্মতিতে হিউম সাহেব তাদের ভাষায় কয়েকজন শিক্ষিত ভারতীয় নেটিভকে নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৮৫৭ সালের মহান সিপাহি বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজি ভাবধারায় শিক্ষিত একটি এলিট শ্রেণির সমন্বয়ে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যা শাসক ও শাসিতদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে সহায়ক হবে। সেই দলই যে ভবিষ্যতে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করবে, সেটা অবশ্য সেদিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের মাথায় ছিল না।
দলটির নাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, যাকে আমরা কংগ্রেস নামেই বেশি চিনি। পাকিস্তান আমলেও জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬২ সালে মুসলিম লীগ ভেঙে কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে পাকিস্তানের প্রথম কিংস পার্টি গঠন করেছিলেন। বাংলাদেশ-বহির্ভূত উপমহাদেশের কিংস পার্টির কিঞ্চিৎ ইতিহাস বর্ণনা এখানেই শেষ করি।
জেনারেল মইনের কিংস পার্টির ব্যর্থ চেষ্টা
বাংলাদেশে এক-এগারো সরকারের সময়ই কিংস পার্টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ছদ্মবেশী সামরিক অভ্যুত্থান করার সময় থেকেই জেনারেল মইনের বঙ্গভবনের দিকে নজর ছিল। কিন্তু সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্মতি না থাকায় মইনকে সামরিক বাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে মেনে নিতে হয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্র থেকে সেই সময় জেনেছিলাম, ফখরুদ্দীনকে সাময়িকভাবে মেনে নিলেও মইন-মাসুদের পরিকল্পনা ছিল—কিছুদিন গেলে প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন উভয়কে সরিয়ে জেনারেল মইন বঙ্গভবনে ঢুকে যাবেন এবং জেনারেল মাসুদ সেনাপ্রধান হবেন।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় মইন আর মাসুদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের একপর্যায়ে মাসুদ পরাজিত হয়ে রাষ্ট্রদূতের পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। মইনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার খায়েশ কিন্তু থেকেই যায়।
ডিজিএফআই’কে ব্যবহার করে মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে বিএনপি টুকরো করে তার নেতা হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলে মইন পুরোনো রাজনীতিবিদ ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশিকে মাঠে নামান। ফেরদৌস কোরাইশি কয়েকজন দলছুটকে মইনের গোয়ালে জড়ো করতে পারলেও দল গঠন প্রক্রিয়া সফল হয়নি। পরিশেষে দিল্লির শর্ত মেনে নিয়ে জেনারেল মইন হাসিনাকে ক্ষমতায় এনে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নিজের চাকরি ও পরিবারের বিত্তবৈভব রক্ষা করেছিলেন।
বিডিআর ম্যাসাকারে মইনের নির্লিপ্ততা সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সেই চুক্তিরই অংশ ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশে মিরজাফররা যুগে যুগে জন্মায়। উল্লেখ্য, এক-এগারো সরকারের প্রারম্ভে কয়েকজন সুশীলের উৎসাহে ড. ইউনূস দল গঠনের ঘোষণা দিয়েও জনসমর্থনের অভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পিছিয়ে যান। কিংস পার্টির এর আগের প্রচেষ্টাটি ছিল আশির দশকে অপর এক জেনারেলের।
এরশাদের জাতীয় পার্টি
জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশে দুর্নীতি সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
আওয়ামী লীগের সমর্থনে সাড়ে আট বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতা হারালেও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে পরবর্তী দেড় দশকে তার প্রতিষ্ঠিত কিংস পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে অবস্থান সংহত করতে সমর্থ হয়েছিল। বরাবরই ভারতের বি-টিম হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে বিসর্জনে প্রকাশ্য ভূমিকা রাখলে রাজনীতিতে দলটির অন্তিম যাত্রা আরম্ভ হয়।
জাতীয় পার্টি ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি করে বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে গণধিকৃত দলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কেবল রংপুর জেলায় সীমাবদ্ধ দলটির দাফন আগামী নির্বাচনে সম্পন্ন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি উত্তরাঞ্চল ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে, একসময় এরশাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরেও জাতীয় পার্টির এবার একটি আসনেও জেতার সম্ভাবনা নেই।
শহীদ জিয়ার বিএনপি
বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের এযাবৎ একমাত্র সফল কিংস পার্টির নাম বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাগদল নামে একটি জাতীয়তাবাদী প্ল্যাটফর্ম যাত্রা শুরু করার পর আরো কয়েকটি দলের সমন্বয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন দলে যোগ দেওয়া পুরোনো দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভাসানী ন্যাপ, মুসলিম লীগ, কাজী জাফরের ইউপিপি, মাওলানা মতিনের লেবার পার্টি ও রসরাজ মণ্ডলের তফসিল ফেডারেশন।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও হামিদুল্লাহ খান নবগঠিত দলের যথাক্রমে কনভেনর, সেক্রেটারি জেনারেল ও এক্জেকিউটিভ সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। দলের প্রথম কনভেনিং কমিটির সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৬। উল্লেখ্য, দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বর্তমান বাংলাদেশের তর্কাতীতভাবে বৃহত্তম দল, যেটি আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের জন্য অপেক্ষমাণ।
পাঠকের মনে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া উচিত যে, সবগুলো কিংস পার্টি ব্যর্থ হলেও কোন জাদুবলে বিএনপি দেশের বৃহত্তম দলে পরিণত হলো? একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে আমার কাছে এই সাফল্যের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়:
১. জেনারেল জিয়ার অতুলনীয় জনপ্রিয়তা । বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়ার মতো আর কেউ জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। ১৯৭১ সালের দেবতাতুল্য শেখ মুজিব ক্ষমতার এক বছরের মধ্যে জাতীয় ভিলেনে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে তার একদলীয় বাকশাল সরকারের রক্তাক্ত পতনে দেশের মানুষ রীতিমতো উল্লাস করেছিলেন।
আর ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে কট্টর আওয়ামী লীগ ব্যতীত দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন। আমি অতীতের একাধিক লেখায় মন্তব্য করেছি, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একমাত্র জিয়াই প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের মতো তুমুল জনপ্রিয় নেতাকে দলের কান্ডারি রূপে পেয়ে বিএনপি প্রথম থেকেই বাজিমাত করেছিল।
২. বিএনপি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নতুন ও শক্তিশালী রাজনৈতিক বয়ান সাফল্যের সঙ্গে হাজির করতে পেরেছিল, যা এখনো জাতিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। জিয়াউর রহমান ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামের শক্তি ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তার ছবি ও রাজনৈতিক বয়ানের শক্তিতে বলীয়ান বিএনপি’কে তাই শত চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত দুর্বল করা সম্ভব হয়নি।
৩. রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কিছু ভারতীয় ও আওয়ামী দালাল সেনা কর্মকর্তার অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্ত্রী সাফল্যের সঙ্গে দলের হাল ধরেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরাচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নিজের এক অসাধারণ ও আপসহীন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়ায় বিএনপি জিয়ার শূন্যস্থান সহজেই পূরণ করতে পেরেছিল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম জিয়া অনেক ত্যাগের বিনিময়ে জনমানসে তার ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় অমলিন রাখতে পেরেছেন। এ দেশের রাজনীতিতে তিনিই শেষ ক্যারিশমাটিক নেতা।
তরুণ তুর্কিদের দল
এবার আসি বিপ্লবী তরুণদের নতুন দল প্রসঙ্গে। এটাকে কি বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির মতো প্রথাগত কিংস পার্টি বলা যাবে? ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তরুণ ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে মহান জুলাই বিপ্লবের ফসল হলেও আমার নির্মোহ বিশ্লেষণে এনসিপি’কে তিন কারণে প্রথাগত কিংস পার্টি এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। প্রথম কারণ, এই দলের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারপ্রধান ড. ইউনূস নেই এবং তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ আছে বলেও আমরা জানি না।
দ্বিতীয় কারণ, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে তবেই দলের হাল ধরেছেন। এবং তৃতীয়ত, আগের মতো নতুন দল সৃষ্টিতে ডিজিএফআইয়ের কোনো ভূমিকার কথা এখনো শোনা যায়নি; বরং সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বিতর্কিত বক্তব্যে তরুণদের প্রতি এক ধরনের বিরাগ প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং এনসিপি’কে সরকার-সমর্থিত বলা গেলেও প্রথাগত কিংস পার্টির ট্যাগ দেওয়া যাচ্ছে না। এখন যদি আগামী নির্বাচনের আগে ড. ইউনূস সরাসরি দলের হাল ধরেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে অবশ্যই এনসিপিও জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কাতারভুক্ত হবে।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য, সরকার-সংশ্লিষ্টতার ফলে তরুণদের দলের কিংস পার্টি-বিষয়ক বিতর্কের অবসান সহজে হবে না। দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সরকার থেকে নাহিদ পদত্যাগ করায় বিতর্কের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমেছে। এখন আসিফ ও মাহফুজ নিশ্চিতভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন। বাংলাদেশে বিএনপি ব্যতীত আর কোনো কিংস পার্টির সফল না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির ভবিষ্যৎ নিয়েও সংগত প্রশ্ন উঠতে পারে। অজানা ভবিষ্যতের বিষয়ে বর্তমানের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শুধু একপ্রকার আন্দাজ করতে পারি।
তবে বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গাটি, অর্থাৎ দুই নেতার মুখ (রাষ্ট্রপতি জিয়া ও খালেদা জিয়া) এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রথম রাজনৈতিক বয়ান—এই দুই ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত এনসিপির দুর্বলতা রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতেও জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার মতো বিশাল চরিত্রের প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে সম্ভব নয়, তাই ওই চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। এনসিপি’কে তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের অসাধারণ সততা, প্রচণ্ড কর্মকুশলতা ও প্রশ্নাতীত দেশপ্রেমিক ভাবমূর্তিকে মেনে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।
তবে বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান দৃশ্যত ক্রমেই তথাকথিত সেক্যুলারিজমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বিধায় তরুণরা যদি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই বিপ্লবের ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় হেজেমনিবিরোধী বয়ানকে সম্পৃক্ত করে দলের ম্যানিফেস্টো ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারে, তাহলে বিএনপির রাজনৈতিক বয়ান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
নতুন দলের প্রস্তুতিপর্বে বেশ অনৈক্য দেখা গেছে। অনভিজ্ঞ তরুণরা অনৈক্যের চ্যালেঞ্জ ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা কীভাবে সামাল দেয়, সেটাও দেখার ব্যাপার। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মঞ্চে সব তরুণ মুখকে দেখে বড় ভালো লেগেছে। ক্ষমতায় যাওয়া এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তরুণদের আগমনে যদি রাজনীতির নষ্ট কালচারের পরিবর্তন হয়, সেটাই জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন হবে।
লেখালেখি করে প্রায় সব পক্ষকে অসন্তুষ্ট করার এক বিরল প্রতিভা আমার রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও শাহবাগি সুশীল ও বামেরা আমার চিরন্তন শত্রুর ভূমিকায় তো আছেই। ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিএনপিও বিরূপতায় আওয়ামী কাতারে চলে গেছে। তাদের একান্ত দলীয় অনুষ্ঠানেও নাকি আমার দেশ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করা হয়।
আজকের লেখা পড়ার পর আমি নিশ্চিত যে, তাদের ক্রোধ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে; কারণ সত্য হজম করা এ দেশে রাজনীতিবিদদের ধাতে নেই। আমি আশা করতে চাই, ড. ইউনূস ও নতুন দলের তরুণ নেতারা তাদের সম্পর্কে আমার মন্তব্যকে একাডেমিক আলোচনা হিসেবেই গ্রহণ করবেন। তা না হলেও অসুবিধা নেই। আমার দেশ তো সব সময় স্বাধীনতার কথাই বলে এসেছে। আমার জীবনের লাস্ট ইনিংসেও তার কোনো পরিবর্তন হবে না।


সূত্রঃ দৈনিক আমারদেশ।



শেয়ার করুন